৯টি সমস্যা ও তার সমাধানঃ যা আপনাকে নিয়ে যাবে সাফল্যের শিখরে - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

January 29, 2021

৯টি সমস্যা ও তার সমাধানঃ যা আপনাকে নিয়ে যাবে সাফল্যের শিখরে


খোরাসানের স্কুলের একজন  প্রসিদ্ধ আলিম ও শিক্ষক ইব্রাহিম ইবনে আদহাম। আর উনার শিষ্য ছিলেন আরেক আল্লাহর অলী সাকিক আল বালখি। সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর শিক্ষা লাভের পর ওস্তাদ ছাত্রের কাছে জানতে চাইলেনঃ

- আমি তোমাকে কি কিছু শিখাতে পারলাম? 

- এই চল্লিশ বছরে তুমি কি শিক্ষা লাভ করলে? 


সাকিক আল বালখি বলেনঃ জানিনা, কতটুকু শিখেছি। তবে, নয়টি  সমস্যা বুঝতে পেরেছি।


ইব্রাহিম ইবনে আদহাম চিন্তিত হয়ে বললেনঃ সময়ের বুঝি  নিদারুন অপচয় হলো। আচ্ছা শুনি কি সমস্যা বুঝলে।


সাকিক আল বালখি বলেনঃ

সমস্যাঃ এক

যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে । ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোবাসা আছে। দেহ যখন কবরে চলে যায়, সবচেয়ে আপনজনও আলাদা হয়ে যায়। এটা একটা বিশাল সমস্যা। 

সমাধানঃ এই সমস্যা থেকে সমাধানের পথ আমি কোরআনে পেয়ে গেলাম।  আমি সুকর্মকে আপন করে নিলাম। যাতে সবাই আলাদা হয়ে গেলেও এই সুকর্ম কবরে আমার সাথী  হয়। 


সমস্যাঃ দুই

আরেকটি সমস্যা হলোঃ মানুষ যখন মারা যায় এতো দিন ধরে অর্জিত জীবনের সব সম্পদ তার হাত ছাড়া হয়ে যায়। 

সমাধানঃ এই সমস্যার সমাধান আমি কোরআনে পেলাম।  তুমি যা নিজের জন্য রেখে দাও, তা একসময় অন্যের হস্তগত হবে।  যদি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো, তা পরকালের জন্য রয়ে যাবে। সুতরাং আমার প্রয়োজনকে আমি ছোট করতে লাগলাম। আর আল্লাহর প্রয়োজনকে বড় করতে লাগলাম। আর আল্লাহর যা প্রয়োজন প্রকৃতপক্ষে পরকালে তাতো  আমারই প্রয়োজন। উপার্জনের একটা  অংশ তাই আমি  আল্লাহর হেফাজতে দিয়ে দিলাম।


সমস্যাঃ তিন

যে বিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে মানুষ দুনিয়াতে আসে। সে আত্মাকে পরিশুদ্ধ রাখা যায়না।দিন দিন সেই আত্মা শুধু কলুষিত হতে থাকে। এটাও একটা সমস্যা। 

সমাধানঃ এই সমস্যারও সমাধান পেলাম কোরআনে। প্রকাশ্যে এবং গোপনে তুমি আল্লাহকে ভয় করো। তোমার সব গোপন কিছু, গোপন অভিলাষও আল্লাহ দেখছেন। তোমার আত্মা যদি পরিশুদ্ধ থাকে জান্নাত তোমার নিবাস হবে।  আল্লাহ ভীতি যত বাড়তে থাকলো, আমার হৃদয়ের পরিশুদ্ধতাও তত বাড়তে থাকলো।


সমস্যাঃ চার

আমি দেখলাম নিজের গুরুত্ব, মর্যাদা বাড়ানোর জন্য মানুষের সম্পদ, পদ, মসনদ এই তিনটির প্রতি লোভ বেড়েই চলে। কিন্তু এক রাজ্যে এক মসনদের মালিকতো সবাই হতে পারেনা। আর হতে পারলেও এসব কিছুইতো ক্ষণস্থায়ী। সময়ের কাঠগড়ায় সব কিছুই একসময় কঙ্কাল হয়ে যায়। তাহলে মর্যাদা বাড়ে কিসে?

সমাধানঃ আমি সমাধান পেলাম কোরআনে। তোমাদের মাঝে যে সবচেয়ে ন্যায়নিষ্ঠ এবং ধার্মিক সেই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশী মর্যাদাবান। তাই, পৃথিবীর সব মোহ মর্যাদা ভুলে গিয়ে আমি আল্লাহর কাছে সম্মানিত হওয়ার পথই বেছে নিলাম। 


সমস্যাঃ পাঁচ

আমি চারপাশে মানুষের ক্ষণস্থায়ী ভরসা দেখলাম। কারো ভরসা ক্ষমতায়, কারো ভরসা ব্যবসায়,  কারো ভরসা চাকুরিতে, কারো ভরসা  দেহের শক্তিতে। নানা জনের ভরসা নানা জিনিসের উপর। এটাও একটা সমস্যা। 

সমাধানঃ সমাধান পেলাম কোরআনে। যে আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার পর এক আধ্যাত্মিক শক্তির সন্ধান যেন আমি পেলাম। সব কিছু বাদ দিয়ে আমি শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা রাখা শুরু করলাম। আমার সমস্ত পেরেশানি কমে গিয়ে আমি একেবারে নির্ভয় হয়ে গেলাম।


সমস্যাঃ ছয়

আমি দেখলাম চারপাশে মানুষ একজন আরেকজনের সাথে নানা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। কি একটা ভয়ানক ক্ষতির মাঝে মানুষ নিমজ্জিত। এটা একটা সমস্যা।

সমাধানঃ আমি আল্লাহর কাছে ফিরলাম এবং সমাধান পেয়ে গেলাম। বান্দা বান্দা সংঘাত করোনা। একজন অন্যজনের হক নষ্ট করোনা।  মানুষ মানুষের শত্রুনা। শয়তানই তোমাদের শত্রু। আর এই শয়তান হলো যে কলব নষ্ট করে। সুতরাং এই শুত্রুকেই আমি একমাত্র শত্রু মনে করলাম। আর সমস্ত সংঘাত, সংঘর্ষ এড়িয়ে চললাম।


সমস্যাঃ সাত

একদিন প্রচন্ড দাবদাহ। মরুর বালু যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ফুটছে। গৃহে পান করার পানি ফুরিয়ে গেছে। নিকটস্থ কুয়ায় গেলাম। সেখানেও পানি শুকিয়ে গেছে। নিদারুন তৃষ্ণায় বুক শুকিয়ে আসছে। চিন্তা করলামঃ এর চেয়ে কঠিন তৃষ্ণার মাঝে পড়বে মানুষ হাশরের ময়দানে। শিশু জন্ম গ্রহণ করেই মায়ের দুগ্ধ পান করে। ভূমিষ্ঠ হয়েই খাবারের যোগান পেয়ে যায়। এই দুধেই তার তৃষ্ণা, খাবারের ক্ষুধা মিটে । কিন্তু হাশরের ময়দানে আমি তো কাউকে পাবোনা। কে আমার তৃষ্ণা মিটাবে। বিশাল সমস্যা। 

সমাধানঃ সমাধান পেয়ে গেলাম কোরআনে। যারা সত্যবাদী, নবী সাঃ নিজেই তাদের কাউসারের পানি পান করিয়ে তৃষ্ণা মিটাবেন। আমি মিথ্যা বলা ছেড়ে দিলাম। আর সারা জীবনে  একটাও মিথ্যা না বলার শপথ নিলাম।


সমস্যাঃ আট

কেউ রাজার ঘরে জন্ম নেয়। কেউ প্রজার ঘরে জন্ম নেয়। কারো রং সাদা, কারো রং কালো। এতে কেউ মর্যাদা বেশি পাচ্ছে। কেউ পাচ্ছে না।  কারো গৌরব বাড়ছে। কারো কমছে। কেউ সুন্দর, কেউ অসুন্দর হয়ে জন্ম নেয়।  জন্মই মানুষের মাঝে বৈষম্য তৈরি করে দিচ্ছে। বিশাল সমস্যা। 

সমাধানঃ সমাধান পেলাম নবী সাঃ এর শেষ ভাষণে। আর কোরআনে। আরবের উপর অনারবের এবং অনারবের উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সাদার উপর কালোর আর কালোর উপর সাদার কোন মর্যাদা নেই। 'তাকওয়াই' শুধু পার্থক্য নির্ণয় করবে। রাজা না-বাদশাহ না, ধনী না-ফকির না। ফর্সা না-কালো না। সেই সবচেয়ে বেশি মর্যাদা বান, যে যত বেশী পরহেযগার আর গুণবান। আর শিক্ষা নিয়ে হোক, বর্ণ নিয়ে হোক, বংশ নিয়ে হোক, পদবী নিয়ে হোক, এমনকি বেশী ধর্ম-কর্ম করে, এটা নিয়েও কেউ যদি তিল পরিমান গৌরব করে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। নিজের অহমকে দমন করতে হবে। যে বীর সে শত্রু ধ্বংস করে। আর যে মহাবীর সে নিজের ইগোকে ধ্বংস করে। আমি সমস্ত অহম, গরীমা, গৌরব থেকে পরিত্রানের পথ খুঁজতে লাগলাম। 


সমস্যাঃ নয়

এই যে পৃথিবীর প্রতি, জীবনের প্রতি একটা মায়া। এই মায়ার জীবন ছেড়ে চলে যাওয়া বড় কঠিন।  জীবনে থাকে মৃত্যু ভয়। জঙ্গলে থাকে বাঘের ভয়। আর জঙ্গলে বাঘ আছে জানলে সেই জঙ্গল আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্তু মৃত্যু ভয় জানার পরও এটা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ তো কোনো মানুষের নাই। বিশাল সমস্যা। 

সমাধানঃ সমাধান পেয়ে গেলাম কোরআনে। যে যেখান থেকে আসে, তাকে সেখানেই ফিরে যেতে হয়।  আমি যত বেশি কবরে সাথী পাওয়ার কাজ করতে লাগলাম,  হাশরে নবী সাঃ কাছে থেকে কাউসারের পানি পান করার সুযোগ তৈরি করতে লাগলাম, রবের কাছে মর্যাদা বানানোর ফিকির করতে লাগলাম। তত আমার মৃত্যু ভয় কেটে গেলো। আর আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেনঃ মানুষ আল্লাহর কাছ থেকে আসে। আর তার কাছেই প্রত্যাবর্তন করে। 


পরদিন ভোরে ফজরের নামাজের পর খোরাসান মসজিদে দেখা যায়, একজন পৌঢ় গভীর মমতায় একজন মধ্য বয়স্ক লোককে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেছেন। চোখে অশ্রু দানা। সেই অশ্রু দানা বিন্দু বিন্দু জমে এবার কপোল বেয়ে নামতে শুরু করেছে। পৌঢ় বলছেনঃ রাতে  নবীজী সাঃ কে স্বপ্নে দেখলাম। বলছেনঃ আমি এমন একজন শিষ্য পেয়েছি, যে শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছে। মাথার পাগড়িটা খুলে তিনি শিষ্যের মাথায় পরিয়ে দেন। মধ্য বয়স্ক লোকের চোখ দিয়েও পানি পড়ে। ওস্তাদের হস্ত চুম্বন করে সেই পাগড়ি গ্রহণ করেন। 

এবার কল্পনা করুনঃ একদিনেই ঘরে বসে আলিফ, বা , তা ছা পড়ে আলিম হওয়ার শিক্ষা না। বরং এটুকু শিক্ষা গ্রহণ করে এর মর্মার্থ  অনুধাবন করতে সময় লেগেছিলো সুদীর্ঘ চল্লিশটি বছর। 


ওস্তাদ ইব্রাহীম ইবনে আযহাম ৭৮২ হিজরী সালে আর তার যোগ্য শিষ্য সাকিক আল বালখি ৮১০ হিজরী সালে ইন্তেকাল করেন। রাব্বুল আলামীন  এই গুরু শিষ্যকে জান্নাতের মেহমান হিসাবে কবুল করুন।


No comments:

Post a Comment

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।