শ’বেবরাত ও প্রচলিত বিভ্রান্তিঃ ড. মাওলানা খলিলুর রাহমান মাদানী - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

March 29, 2021

শ’বেবরাত ও প্রচলিত বিভ্রান্তিঃ ড. মাওলানা খলিলুর রাহমান মাদানী

 


বেবরাত ও প্রচলিত বিভ্রান্তি

কুরআন-সুন্নাহর ফয়সালায় শবে বরাত। শবে বরাত পালন বিদয়াত'না ইবাদাত?

 

শবেবরাত প্রশ্নে সকলেই একমত যে,

১. হাসান হাদিস ও কতিপয় দুর্বল সনদে বর্ণিত হাদীস দ্বারা শবে বরাতের ফজিলত প্রমাণিত।

২. এ রাতকে কেন্দ্র করে নফল ইবাদতের ব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য নেই।

৩. এরাতে গুনাহ মাফ হয় সে ব্যাপারেও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

৪. এ রাতকে ভাগ্য রজনী মনে করা ঠিক নয়।

৫. এ রাতকে কেন্দ্র করে প্রচলিত সকল বিদআত ও কুসংস্কার একান্তই বর্জনীয়।

৬. শবে বরাতের প্রশ্নে হাসান হাদিস অস্বীকার করে ছাড়াছাড়িরও সুযোগ নেই, আবার জাল হাদিস বানিয়ে ভৌতিক গল্প করে বাড়াবাড়ির ও সুযোগ নেই।

৭. যারা দ্বীনি  ‍মুহাব্বাতে নফল ইবাদতে মশগুল হন ও মসজিদ পানে ছুটে চলেন, তাদেরকে থামিয়ে দেয়ার দুঃসাহস দেখানো সমীচিন নয়।

৮. এ রাতের সব আমলই নফল বা মুস্তাহাব, তা আমল করতে যেয়ে কোনভাবেই যেন ফরজ ছুটে না যায়।

 

[২০১৬ইং সনের ১৫ শাবানের পূর্বে এক সপ্তাহ যাবত দেশের শীর্ষ উলামা-মাশায়েখ ও শতাধিক মুফতিদের মতামত গ্রহণ করি। সকলেরই প্রায় এক ও অভিন্ন অভিমত পাওয়া যায়।]

বিস্তারিত লিংকেঃ https://youtu.be/lLZ5xC6Pu0s

 

প্রাথমিক কথাঃ বে বরাত, লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনী হচ্ছে আরবী শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত, যা ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে শব-ই-বরাত নামে পালিত একটি পূণ্যময় রাত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলিম উম্মাহ বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ধরণে এটি পালন করেন। শবে বরাত বা মধ্য শাবানের এ রজনী নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। এ রাতের ফজিলতের মহাগুরুত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ আছে। কুরআন-সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান বিশেষ করে নফল ইবাদতের ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা এই পথ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। আর এতে মুসলিম উম্মাহর বিভাজনের রেখা অনেকাংশেই মিটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে,শবে বরাত নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কোন বিভেদ-বিবাদ নেই। আছে এই দিনকে কেন্দ্র করে যে সকল বিদয়াত আমাদের সমাজে প্রচলিত হয়েছে সে সকল বিদয়াত নিয়ে। সহীহ হাদীস দ্বারা জানা যায়, রাসুল (সাঃ) আইয়ামে বিজ তথা প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন।

 

পর্যবেক্ষণঃ

শবে বরাতশব্দটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যবহার করেননি, সাহাবীরা ব্যবহার করেননি, তাবেঈরা ব্যবহার করেননি। এটা প্রায় পাঁচশো বছর পর তৈরি হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে পরিভাষাটি ব্যবহার করেছেন সেটা হলো- লাইলাতুন নিসফি মিন শাবানবা মধ্য শাবানের রাত। তার মানে,‘শবে বরাতবা লাইলাতুল বরাতশব্দটি নবী, সাহাবী, তাবে, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফে, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (আল্লাহ সবার উপর রহম করুন) কেউ ব্যবহার করেননি, এটা অনেক পরে তৈরি হয়েছে।

শবে বরাতবলাটা নাজায়েজ না; কিন্তু লাইলাতুন নিসফি মিন শাবানবলাটা সুন্নাত।

কুরআন-হাদীসে কোথাও শবে বরাতশব্দটি পাবেন না, ঠিক যেমন কুরআন-হাদীসের কোথাও নামাজ, রোজা শব্দগুলো পাবেন না। আপনি পাবেন সালাত, সিয়াম। তাই বলে, নামাজ-রোজা কুরআন-হাদীসে নাই এজন্য এগুলো বললে নাজায়েজ হয়ে যাবে, এমন না। এগুলো পারিভাষিক শব্দ। নামাজ-রোজা এগুলো হলো ফারসি শব্দ। আবার, কুরআন-হাদীসের কোথাও পীরশব্দটি নেই। পীরশব্দটি ফারসি শব্দ, এর সমার্থক আরবি শব্দ হলো শায়েখ। এই শায়েখশব্দটিও কুরআন-হাদীসে নেই। তবে এটার কুরআনিক শব্দ হলো সোহবত-সাহেব। ঠিক তেমনি কুরআন-হাদীসে শবে বরাতনেই, ‘লাইলাতুল বরাতও নেই। এর জায়গায় আছে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান

 

কিছু মানুষ মনে করেন নবীজি কিছু করেননিতাই সেটি বিদআত। না, নবীজী কিছু করেননি এই বলে সেটা বিদআত হবে না। নবীজি করেননি তাই সেটা সুন্নাতনা; কিন্তু সেটাকে সুন্নাত মনে করাটা বিদআত।

আবার আরেক গ্রুপ আছেন যারা নবীজি করেননিকিন্তু সেটা জায়েজ। এই যে জায়েজ প্রমাণ করতে গিয়ে তারা নবীর সুন্নাতকে ছোটো বানিয়ে ফেলেন। কোন সুযোগ নেই।[ড. আব্দুল্লাহ জাহাংগীরের র. পর্যবেক্ষণ]

 

সতর্কতা!

উল্লেখ্য যে, সঠিক কোনো প্রমাণ না থাকলেও ইবাদতের শুরুতে মুসলিম সমাজে বিদয়াত চালু হয়েছে ব্যক্তি বিশেষের দোহাই দিয়ে। উদাহরণ স্বরূপ কাউকে যদি বলা হয়, কেন তুমি এভাবে জিকর বা ইবাদত করছ? সে সঙ্গে সঙ্গে বলবে, অমুক অলি, অমুক পীরসাহেব, অমুক আলিম বা অমুক আকাবের করেছেন তাই করি। সে এ কথা বলে না যে, আল্লাহ বলেছেন তাই করি, রাসুল (সা.) বলেছেন, করেছেন বা সম্মতি দিয়েছেন তাই করি বা অমুক সাহাবি করেছেন তাই করি। সত্যিই এটি মহাপরিতাপের বিষয়। যেটা আদৌ কাম্য নয়। তাই বলে নফলিয়াত যা বিভিন্ন কারণে সাব্যস্ত হয়েছে অথবা ফজিলতের বিভিন্ন বিষয় যা জঈফ হাদীস দ্বারা অনুমোদিত ও সাব্যস্ত হয়েছে তা নিয়ে ইখতিরাফ করার প্রয়োজন নেই। মনে রাখতে হবে শবে বরাতের প্রশ্নে বিতর্কিত ও দুর্বল (জয়ীফ) হাদীসের সংখ্যা বেশী হলেও অনেক সংখ্যক সহীহ হাদীসও রয়েছে বিধায় এ রাতের অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোনো সুয়োগ নেই।

হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি হলো জয়ীফ হাদীস সমূহ একাধিক সনদে বর্ণিত হলে তা হাসান হাদীস রূপে পরিগণিত হয়-এ কথা কে না জানে!

রাসূল (সা.) বলেছেন, "يطلع الله في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن". ( الطبراني وابن حبان)، فقد قال فيها المنذري في الترغيب والترهيب إسناده لا بأس به. শাবান মাসের মধ্য রাতে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন, মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষনকারী ব্যক্তি ব্যতিত অন্য সকলকে তিনি ক্ষমা করেন। আল-মুনযিরী তাঁর আত-তারগীব ওয়াত-তারহীবে (২/১৩২) বলেন, “হাদিসটি সহীহ। আহলে হাদিস গুরু আলবানী-রা.ও বলেন হাদিসটি সহীহ। আস্- সাহীহাহ (৩/১৩৫)।

হাদীস মতে আল্লাহ তায়ালা যদি এ রাতে দুনিয়ার আকাশে আসেন, যদি তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন, যদি অসংখ্য পাপীতাপী বান্দা আল্লাহর রহমত ও কৃপা লাভ করেন, যদি তারা পরিতাপ, গ্লানি নিঃশেষে মুক্তচিত্তে পুণ্যপথে অগ্রসর হন, তবে কোন যুক্তিতে বাধা আসবে? কি কারণে নিরুৎসাহিত করা হবে? খামাখা কোন ভাল জিনিসে জটিলতা সৃষ্টিতে কী লাভ? কোন বিষয় নিয়ে প্যাঁচা-প্যাঁচি করতে গেলে জট কেবল বাড়তেই থাকবে। জট বাঁধাতে ইচ্ছে করলে অনেক বিষয়ে সহীহ হাদিসটেনেও বাঁধানো যেতে পারে। যে সব সাধারণ মানুষ এতকাল ধরে শবে বরাত পালন করে আসছে তাদের সামনে বিদ্যার প্যাঁচ মেরে শবে বরাতের গুরুত্ব ও মহিমা খাটো করে ব্যাখ্যা হাজির করা যাবে বটে; কিন্তু এতে দ্বীনের কোন উপকার হবে কি? নফলিয়াত আদায়ের উছিলায় শুধু এই একটি রাতে কত শত সহস্র লোক আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে ইবাদত বন্দেগী করে, আল্লাহর নাম নেয়, কুরআন চর্চা করে, নামাজ পড়ে, জিকির আযকার করে। এই সুবাদে তাদের ছেলে-মেয়েরাও ইবাদতের পরিবেশ পেয়ে কান্নাকাটি করে রবের দুয়ারে মোনাজাত করে ধর্ণা দেয়। কিন্তু বিদ্যার ঠাকুর এসে যদি সে রাতের বরকতের দুয়ারে তালা লাগিয়ে দেন তাতে সর্বসাধারণের কি লাভ? আমরা কত সামাজিক অনুষ্ঠান তো করি, কিন্তু সে ব্যাপারে কেউ তো ফতোয়াবাজী করার সাহস পায় না! তবে কেন নফল ইবাদত থেকে ফিরিয়ে রাখতে ফতোয়া দেয়া হবে?

 

বে বরাত বা মধ্য শাবানের রজনী পালনকারীদের ওজর!

অনেকে বলে থাকেন, কুরআন-হাদীসের কোথাও শবে বরাত শব্দ নেই। শবে বরাত বিরোধীদের এরূপ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, শব অর্থ রাত, বরাত অর্থ ভাগ্য, বে বরাত শব্দ দুটি যেরূপ কুরআন ও হাদীস শরীফের কোথাও নেই তদ্রূপ নামায, রোযা, খোদা, ফেরেশতা, পীর ইত্যাদি শব্দ কুরআন ও হাদীসের কোথাও তো নেই। [সালাত,সাওম আছে] এখন শবে বরাত বিরোধী লোকেরা কি নামায, রোযা ইত্যাদি শব্দসমূহ কুরআন ও হাদীসে না থাকার কারণে ছেড়ে দিবেন? মূলতঃ শবে বরাত এবং এর ফযীলত পবিত্র কুরআনে সরাসরি না থাকলেও সূরা দুখানের ৩নং আয়াতের তাফসীরে কতিপয় মুফাসসির নিসফে শাবানের রাত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা সেটাকে প্রাধান্য না দিলেও সহীহ কতিপয় হাদীস শরীফ দ্বারা এ রাতের গুরুত্ব ও ফজীলত প্রমাণিত। আর হাদীস শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা শাবান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

বে বরাত বিষয়ে শরয়ী দলীলঃ

বে বরাতের অস্তিত্ব প্রমাণে বিভিন্ন সহীহ হাদীস বিদ্যমান। বেশ কিছু জয়ীফ হাদীসও রয়েছে যে জঈফ হাদীস ফজিলতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। আবার একাধিক সনদে জয়ীফ হাদীস সমূহ বর্ণিত হওয়ায় তা হাসান হাদীস রূপে পরিগণিত। কুরআন মজীদে ব্যবহৃত লাইলাতুল মোবারাকাহবাক্যাংশটি অনেকে বে বরাতউল্লেখ করেন। এই আয়াতখানা সূরা দুখানে এভাবে এসেছে, ﴿ إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ، فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ আমি এই কুরআনকে এক মহিমাময় (বরকতময়) রাতে নাজিল করেছি। আমি অবশ্যই সর্তককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়সালা হয়। (সূরা আদ দুখান-৩/৪)

এখানে উল্লেখিত আয়াতটি শবে ক্বদর হিসেবে আমরা জানি। তবে যারা আয়াতটির অর্থধারাকে শবে বরাতেও প্রসারিত করেন, তাদের ব্যাখ্যাও শুনতে পারি। এই ব্যাখ্যা-ধারার তারতীব (ক্রম) হচ্ছে এই যে মধ্য শাবানের রাতে গোটা কুরআন বাইতুল মামুর থেকে দুনিয়ার আসমানে আসে এবং এতে এককালীন গুরুত্ব প্রকাশ পায়। তারপর,লাইলাতুল ক্বদরের রাতে প্রথম অংশ নাজিল হয় এবং তাৎপর্যের দিক দিয়ে এটাই বৃহত্তর এবং মূল তাঞ্জীল। ঐ রাতেই (অর্থাৎ শবে ক্বদরের রাতে) আল্লাহর নির্দেশে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। আর এভাবেই তাঁরা এই দুই রাত কেন্দ্রিক বর্ণনার সমন্বয় করেছেন।

 

এই আয়াতে (يُفْرَقُ ইয়ুফরাকু) শব্দের অর্থ ফায়সালা করা। প্রায় সমস্ত তাফসীরে সকল মুফাসসিরীনে কিরামগণ يُفْرَقُ (ইয়ুফরাকু) শব্দের তাফসীর করেছেন ইয়ুকতাবু অর্থাৎ লেখা হয়, ইয়ুফাছছিলু অর্থাৎ ফায়সালা করা হয়, ইয়ুকতাজা অর্থাৎ ফয়সালা নির্ধারণ করা হয়, ইয়ুবাররেমু অর্থাৎ বাজেট করা হয়, ইয়ুকদ্বিয়ু অর্থাৎ নির্দেশনা দেওয়া হয়। কাজেই ইয়ুফরাকুর অর্থ ও তার ব্যাখার মাধ্যমে আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, লাইলাতুল মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাত্রিতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য শবে বরাতকে লাইলাতুত তাফরিক অর্থাৎ ফায়সালার রাত্র এবং শবে ক্বদরকে লাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ নির্ধারিত ফায়সালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়। (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান ইত্যাদি)।

এখানে হাফেয ইবনু কাছীরের (রহঃ) ব্যাখ্যাটিই বেশি গ্রহণযোগ্য, তিনি স্বীয় তাফসীরে বলেন, ‘এখানে লাইলাতুল মুবারাকাহ বা বরকতময় রাত্রিঅর্থ ক্বদরের রাত্রি। যেমন আল্লাহ বলেন, ﴿ إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ الْقَدْرِ নিশ্চয়ই আমরা এটি নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে’ (ক্বদর ৯৭/১)। আর সেটি হল রামাযান মাসে। যেমন আল্লাহ বলেন,﴿ شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِى ُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ﴾ এই সেই রামাযান মাস যার মধ্যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)। রমাদান মাসে অবস্থিত কদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে, তা একটি অকাট্য বিষয়। (তাফসীরে ইবনু কাছির ৪/১৯৮)

# “তাক্বদীরসম্পর্কে পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য হল- وَكُلُّ شَىْءٍ فَعَلُوْهُ فِى الزُّبُرِ- وَكُلُّ صَغِيْرٍ وكَبِيْرٍ مُسْتَطَرٌতাদের সমস্ত কার্যকলাপ রক্ষিত আছে আমলনামায়। আছে ছোট ও বড় সবকিছুই লিপিবদ্ধ’ (সূরা ক্বামার ৫৪/৫২-৫৩)-এর ব্যাখ্যা হাদীছে এসেছে যে,“আসমান সমূহ ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বৎসর পূর্বেই আল্লাহ স্বীয় মাখলূক্বাতের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করেছেন। (বুখারী) অতএব শবে বরাতেই সারাবছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয় এধারণা পাল্টাতে হবে। এটাই আমাদের মৌলিক আকিদা।

 

শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীস ও সনদের মানঃ

১. সাহাবী আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَاমধ্য শাবান এলে তোমরা রাত্রিতে ইবাদত কর ও দিবসে ছিয়াম পালন কর’ (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৮)। হাদীছটি যঈফ (যঈফাহ হা/২১৩২)। এর সনদে ইবনু আবী সাবাহনামে একজন রাবী আছেন, যিনি বিতর্কিত। তবে- একই মর্মে প্রসিদ্ধ হাদীছে নুযূলযা ইবনু মাজাহর ৯৮ পৃষ্ঠায় মা আয়েশা (রাঃ) হতে (হা/১৩৬৬) এবং বুখারী শরীফের (মীরাট ছাপা ১৩২৮ হি.) ১৫৩, ৯৩৬ ও ১১১৬ পৃষ্ঠায় যথাক্রমে হাদীছ সংখ্যা ১১৪৫, ৬৩২১ ও ৭৪৯৪ এবং কুতুবে সিত্তাহসহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে সর্বমোট ৩০ জন ছাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। সেখানে মধ্য শাবানের রাত্রিনা বলে প্রতি রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশবলা হয়েছে। অতএব ছহীহ হাদীছ সমূহের বর্ণনানুযায়ী আল্লাহ পাক প্রতি রাত্রির তৃতীয় প্রহরে নিম্ন আকাশে অবতরণ করে বান্দাকে ফজরের সময় পর্যন্ত উপরোক্ত আহবান সমূহ জানিয়ে থাকেন- হয়তোবা শুধুমাত্র নির্দিষ্টভাবে মধ্য শাবানের একটি রাত্রিকে সীমাবদ্ধ করলাম না। তাই বলে কি শবে বরাত অস্বীকার করতে পারবো?

২. হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত : فَقَدْتُ رَسُولَ الله -صلى الله عليه وسلم- لَيْلَةً فَخَرَجْتُ فإذا هو بِالْبَقِيعِ فقال: أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ الله عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ، قلت: يا رَسُولَ اللَّهِ إني ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فقال: إِنَّ اللَّهَ عز وجل يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ من شَعْبَانَ إلى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لِأَكْثَرَ من عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ كَلْبٍ. তিনি বলেন, একদা আমি আল্লাহ তাআল্লার হাবীব রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত যাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন স্ত্রীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর হুজরায় গিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় ঘরে ফিরে এলে তিনিও ফিরে এলেন এবং বললেনঃ তুমি কি মনে করো আল্লাহ তায়ালার হাবীব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমানতের খিয়ানত করেছেন? আমি বললামঃ ইয়া রসূলাল্লাহ (সা.)! আমি ধারনা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অন্য কোন আহলিয়ার হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা শাবানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন। (সুনানে তিরমিযি (২/১২১, ১২২), (মুসনাদে আহমাদ ৬/২৩৮) ইবনে মাযাহ, রযীন, ফাওজুল ক্বাদীর, ২য় খন্ড,৩১৭)।

৩. মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন,রাসূল (সা.) বলেছেন,শাবান মাসের মধ্য রাতে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন,মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষনকারী ব্যক্তি ব্যতিত অন্য সকলকে তিনি ক্ষমা করেন। (আলবানীঃ সহীহাহ /৩/১৩৫,১৩৯)

৪. মুয়ায বিন জাবাল অন্য বর্ণনায়,-মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিলোকের দিকে দৃষ্টি দান করেন এবং সবাইকে মাফ করে দেন কেবল মুশরিক ব্যক্তি ছাড়া ও যার মধ্যে ঘৃণা বিদ্বেষ রয়েছে তাকে ছাড়া। আল-মুনযিরী তাঁর আত-তারগীব ওয়াত-তারহীবে (২/১৩২) বলেন,“হাদিসটি সহীহ। আহলে হাদিস গুরু আল-আলবানী রা. বলেন হাদিসটি সহীহ। আস-সাহীহাহ (৩/১৩৫)

৫. মুআয বিন জাবালের (রা.) হাদীসঃ হযরত মুআয বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍআল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টির দিকে শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি দেন। অতঃপর তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে মাফ করে দেন,শুধুমাত্র মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত। এ হাদীসটি ইবনি হিব্বান তাঁর ছহীহের মধ্যে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম হাইসামী এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেনঃ رواه الطبراني في الكبير والأوسط ورجالهما ثقاتহাদীসটি ইমাম তাবারানী তাঁর আল-মুযাম আল-কাবীর ও আছ-ছগীরের মধ্যে রিওয়ায়াত করেছেন। এ দুটোতেই হাদীসটির বর্ণনাকারীরা নির্ভরযোগ্য।

৬. সা আবু বকরের (রা.) হাদীসঃ হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, إذا كانت ليلة النصف من شعبان ينزل الله تبارك وتعالى إلى سماء الدنيا فيغفر لعباده إلا ما كان من مشرك أو مشاحن لأخيه. “যখন শাবানের মধ্য রাত আসে, আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হন। তারপর সব বান্দাকে মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি জন শত্রুতাভাবাপন্ন তাদেরকে ছাড়া।

ইমাম হাইসামী مجمع الزوائد এ বলেন: رواه البزار وفيه عبد الملك بن عبد الملك ذكره ابن أبي حاتم في الجرح والتعديل ولم يضعفه وبقية رجاله ثقات. হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে আবদুল মালিক বিন আবদিল মালিক নামে একজন রাবী আছেন। ইবনু আবি হাতিম আল-জারহ অত-তাদিল কিতাবে তার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেন নি। এছাড়া, সনদের অন্যান্য সব রাবী (বর্ণনাকারী) বিশ্বস্ত।

৭. আবু বাকর (রা.) বর্ণনা করেন আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে (দুনিয়ার আসমানে) আসেন এবং সকলকে মাফ করে দেন কেবল সেই ব্যক্তি ছাড়া যার হৃদয়ে ঘৃণা বিদ্বেষ রয়েছে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক সাব্যস্ত করে (অর্থাৎ মুশরিক)। আল-আলবানী বলেন, “হাদিসটি অন্য সূত্রে সহীহ।তাখরীজ মিশকাত আল মাসাবীহ, (১২৫১) ইবন হাজর আল-আসক্বালানী তাঁর আল-আমাল আল-মুত্লাক্বাহ গ্রন্থ (১২২)।

৮. প্রসিদ্ধ ছহীহ হাদীছটি হল-রাসূলূল্লহ (সঃ) বলেন, “আমাদের মহান প্রতিপালক প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, আছ কি কেউ প্রার্থনাকারী আমি তার প্রার্থনা কবুল করব। আছ কি কেউ যাঞ্চাকারী, আমি তাকে তা প্রদান করব। আছ কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী,আমি তাকে ক্ষমা করে দিব?”(ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৯; মিশকাত হা/১২৯৯),কারও কিছু যঈফ হাদীছ যেমন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত (যঈফাহ হা/১৪৫২), আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত (ইবনু মাজাহ হা/১৩৯০; মিশকাত হা/১৩০৬)। এতদ্ব্যতীত ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত ছহীহ মুসলিম হা/১১৬১-এর সিরারে শাবানসম্পর্কিত হাদীছটি বলা হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪)।

৯. আবদুল্লাহ বিন উমরের রা. হাদীস: عن عبد الله بن عَمْرٍو انَّ رَسُولَ الله -صلى الله عليه وسلم- قال: يَطَّلِعُ الله عز وجل إلى خلقة لَيْلَةَ النِّصْفِ من شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ إلا لاِثْنَيْنِ: مُشَاحِنٍ وَقَاتِلِ نَفْسٍ হযরত আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স.) বলেন, “আল্লাহ অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি তাকান। অতঃপর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, দুশ্রেণী ব্যতীত: ক. মুশাহিন (বিদ্বেষপোষণকারী); খ. মানব হত্যাকারী। ইমাম হাইসামী বলেন, رواه أحمد وفيه إبن لهيعة وهو لين الحديث وبقية رجاله وثقوا *ইমাম আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে হয়েছে,ইবনু লাহীয়াহ। তিনি লাইয়্যেনুল হাদীস (হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে কিছুটা কোমলাতা/দুর্বলতা বিশিষ্ট)। তবে অন্যান্য সব রাবী নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। এছাড়া, ইমাম বাযযারও এটি বর্ণনা করেছেন।

১০. আওফ বিন মালিকের হাদীস: عن عوف بن مالك قال قال رسول الله: – الله عليه وسلم- (يطّلع الله تبارك وتعالى على خلقه ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر لهم كلّهم إلا لمشركٍ أو مشاحن আওফ বিন মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা স্বীয় সৃষ্টির উপর শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি নিবন্ধন করেন এবং তাদের সবাইকেই মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও মুশাহিন ছাড়া।

১১. কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামীর হাদীস : عن كثير بن مرة الحضرمي، قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: إن اللهَ ينزل ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر فيها الذنوب إلا لمشركٍ أو مشاحن হযরত কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, *নিশ্চয়ই আল্লাহ শাবানের মধ্য রাতে অবতীর্ণ হন। তারপর এ রাতে মুশরিক ও মুশাহিনের গুনাহ ব্যতীত অন্য সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (ইবনু আবি শাইবাহ ৩/২১৪, আবদুর রাজ্জাক : মুছান্নাফ এবং বাযযার তাঁর মুসনাদের বর্ণনা করেছেন)।

 

উপরের হাদীসসমূহ দ্বারা আমাদের সামনে যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে তাহলো, উপরিউক্ত হাদীসগুলোর সনদসমূহ সমপর্যায়ের নয়। কিছু শুদ্ধ, আবার কিছু দুর্বল। তবে সবগুলো একত্রিত করলে এ কথা না বলে কোন উপায় নেই যে,“এ রাতটির ফজিলত একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।

এজন্য গবেষকগণ বলছেন, إنَّ الأحاديثَ في فضل ليلة النصف من شعبان ثابتة وفي أقلِّ أحولها أحاديث حسنة لغيرها بمجوع طرقها، ومن العلماء من صرح أنها صحيحة لغيرها بمجموع طرقها لأنّ من طرقها حسنة بذاتها বর্ণনার সবগুলো ধারা একত্রিত করলে হাদীসগুলোর সর্ব নিন্মস্তর হবে হাসান লিগইরিহা

অনেক গবেষক আবার স্পষ্ট করে বলছেন যে, এদের সবগুলো ধারা সমন্বিত করলে ছহীহ লিগইরিহার পর্যায়ভুক্ত হবে। কারণ এগুলো যে সব ধারাই বর্ণিত হয়েছে, তাতে নিজেরাই হাসানহিসেবে গণ্য।

এ প্রসঙ্গে শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ সর্বজন স্বীকৃত আলেমদের বক্তব্য হলো,

হাফিজ ইবনু রজব (র.) বলেন, اختلف فيها، فضعفها الأكثرون، وصحح ابن حبان بعضها، وخرجه في صحيحه অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। অনেকেই এগুলোকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু হিব্বান এদের কিছুকে ছহীহ বলেছেন এবং তার ছহীহ কিতাবের মধ্যে তাখরীজ করেছেন।

ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (র.) বলেন, وأما ليلة النصف من شعبان ففيها فضلٌ، وكان في السلف من يصلي فيهاঅর্ধ শাবানের রাতের মাহাত্ম্য রয়েছে। সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে নামায পড়তেন।। (ফতওয়া:২০/১২৩) তিনি আরো বলেন, ليلةُ نصف شعبان رويَ فيها من الأخبار والآثار ما يقتضي أنها مفضلة ومن السلف من خصَّها بالصلاة فيها وصوم شعبان جاءت فيه أخبار صحيحة أما الصوم يوم نصفه مفرداً فلا أصل له، بل يكره، قال: وكذا اتخاذه موسماً تصنع فيه الأطعمة والحلوى وتظهر فيه الزينة وهو من المواسم المحدثة المبتدعة التي لا أصل لها، وما قيل من قَسْمِ الأرزاق فيها لم يثبتঅর্ধ শাবানের রাত্রির ব্যাপারে অনেক হাদীস ও আছার বর্ণিত হয়েছে। যাদ্বারা এ রাতের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়।

সালাফ বা পূর্বসুরীদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে বিশেষ করে নামায আদায় করতেন। শাবান মাসের রোজার ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীস এসেছে। তবে শুধুমাত্র পনেরতম দিবসে একটি রোজা পালন করার কোন মূলভিত্তি নেই। বরং তা মাকরূহ। তিনি আরো বলেন,তদ্রুপ এটিকে রকমারী খাদ্য,হালুয়া তৈরি ও সাজ-সজ্জা প্রকাশের উপলক্ষ্য বানানো বিদআত। যার কোন ভিত্তি নেই। আর এ রাতে রিযিক বন্টিত হয় এ মর্মে যা কিছু বলা হয় তা প্রমাণিত হয়নি ।

ইমাম ইবনু নুজাইম আল-মাসরী বলেন, ومن المندوبات إحياءُ ليالي العشر من رمضان وليلتي العيدين وليالي عشر ذي الحجة وليلة النصف من شعبان كما وردت به الأحاديث وذكرها في الترغيب والترهيب مفصلة والمراد بإحياء الليل قيامه وظاهره الاستيعاب ويجوز أن يراد غالبه، ويكره الاجتماع على إحياء ليلة من هذه الليالي في المساجد. “যে রাতগুলোকে জাগ্রহ রাখা মুস্তাহাব,সেগুলো হচ্ছে: রমাদানের দশরাত্র, দুই ঈদের দুই রাত্র, জিলহাজ্জ মাসের দশ রাত্র ও শাবানের মধ্যরাত্র। এ মর্মে একাধিক হাদীস রয়েছে। তারগীব ও তারহীব কিতাবে এগুলোর বিস্তারিত উল্লে­খ রয়েছে। রাতকে জাগ্রহ রাখার অর্থ হলো, ইবাদাতের মাধ্যমে বিনিদ্র রজনী কাটানো। পুরো রাত বা রাতের বেশির ভাগ সময়, দুটোই হতে পারে। এ সব রাতে ইবাদাতের জন্য মসজিদের একত্রিত হওয়া মাকরুহ।

আল্লামা মুবারাকপুরী রা. তার তুহফাতুল আহওয়াজী নামক গ্রন্থে বলেন, إعلم أنه قد ورد في فضيلة ليلة النصف من شعبان عدة أحاديث مجموعها يدل على أنّ لها أصلاً فهذه الأحاديث بمجموعها حجة على من زعم أنه لم يثبت في فضيلة ليلة النصف من شعبان شيء، والله تعالى أعلم. “অর্ধ শাবানের মাহাত্ম্যের ব্যাপারে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এগুলো সামষ্টিকভাবে প্রমাণ করে যে, এ রাতের একটি ভিত্তি আছে। এসব হাদীস সামষ্টিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ যারা মনে করে অর্ধ শাবানের রাতের ব্যাপারে কিছুই সাব্যস্ত হয়নি। আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে কথা বলেছেন এভাবে, حديث صحيح روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضهহাদীসটি ছহীহ। একদল সাহাবী থেকে বিভিন্ন সূত্রে তা বর্ণিত হয়েছে। যাদের একটি আরেকটিকে মজবুত করেوجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب، والصحة تثبت بأقل منها عدداً، مادامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث.

মোটামুটি কথা হলো, এই সব ধারায় বর্ণিত হাদীসটি নিঃসন্দেহে ছহীহ বা বিশুদ্ধ। এর চেয়ে কমসংখ্যক সূত্র দিয়েও হাদীসের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। যদি না তাতে পবল কোন দুর্বলতা থাকে।

এ রাতের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই,এ মতের প্রবক্তাদের দাবী খন্ডন করতে গিয়ে আল্লামা আলবানী বলেন, ليس مما ينبغي الاعتماد عليه، ولئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول، فإنما أتي من قبل التسرع، وعدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك. এটা নির্ভরযোগ্য কথা নয়। এ ধরণের কথা যদি কেউ সাধারণভাবে বলেও থাকে, তবে তা নিতান্তই তাড়াহুড়ো প্রসূত। হাদীসটির সবগুলো সূত্র বা বর্ণনার ধারা গবেষণায় যথাসম্ভব শক্তি ব্যয় না করেই এমনটি বলা হতে পারে। সবসময় কুরআন তেলাওয়াত, তাসবীহ তাহলীল, ইস্তেগফার, দান-খয়রাত ইত্যাদি বেশী বেশী করা। তবে কোনোক্রমেই শরীয়ত বিরোধী কিছু করা যাবে না বা বিদআত করা যাবে না।

 

সতর্কতবাণী !

শবে বরাত সম্পর্কিত প্রচলিত ভ্রান্ত বিশ্বাস ও আমল

* রাতে গোসল করাকে সওয়াবের কাজ মনে করা ।

* মৃত ব্যক্তিদের রূহ এ রাতে দুনিয়ায় তাদের ঘরে আসে।

* এ রাতে হালুয়া রুটি তৈরী করে নিজেরা খায় ও অন্যকে দেয়া জরুরী মনে করা।

* বাড়ীতে বাড়ীতে এমনকি মসজিদে মসজিদেও মিলাদ পড়ার বাধ্যতামূলক রেওয়াজ বানানো ।

* আতশবাজী-পটকা ফুটানো, মসজিদ, সরকারী-বেসরকারী ভবনে আলোক সজ্জা করা।

* কবরস্থানগুলো আগরবাতি ও মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করা।

* লোকজন দলে দলে কবরস্থানে যাওয়াটাকে জরুরী মনে করা ইত্যাদি।

* মনে রাখা দরকার মধ্য শাবানের রাতে যদি কেউ বিদআত করে, তবে সেই বিদআতের বিপক্ষেই কথা বলা উচিৎ,সেই বিদয়াত ও দুষ্কর্ম দূর করতেই তৎপর হতে হবে।

 

জঈফ হাদীসঃ

জয়ীফ বা দূর্বল হাদীসের ও দুর্বলতার কম বা বেশী হতে পারে। কম দুর্বলতা হাদীস হাসান হাদীসের নিকটবর্তী আবার দূর্বলতা বেশি হতে হতে মওজু বা জাল হাদীসে পরিণত হতে পারে, সে ব্যাপারটা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। জয়ীফ হাদীস আমলে উৎসাহিত করার জন্য বর্ণনা করা যেতে পারে বা করা উচিৎ। তবে আকিদা সাব্যস্ত বা আইন প্রণয়নে গ্রহণযোগ্য তা নয়। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে হুমাম রহমতুল্লহি আলাইহি বলেন,“জয়ীফ হাদীস যা মওজু নয় তা ফজিলতের আমল সমূহে গ্রহণযোগ্য” (ফতহুল ক্বাদীর ২/৪৩৮)। সকল হাদীস বিশারদ একমত,যা আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লহি আলাইহি তাঁর আল মওজুআতুল কবীরের ১০৮ পৃষ্ঠায় বলেন,“সকলে একমত যে জয়ীফ হাদীস ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে। জয়ীফ হাদীস যা মওজু নয় তা ফজিলতের আমল সমূহে গ্রহণযোগ্য (ফতহুল ক্বাদীর ২/৪৩৮)।

উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমাণিত হল যে,জয়ীফ হাদীস ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে। তবে মনে রাখতে হবে জয়ীফ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত সকল আমলই মুস্তাহাব।

যেমনঃ আল্লামা ইব্রাহিম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গুলিয়াতুল মুস্তামালী ফি শরহে মুনিয়াতুল মুছালি­ কিতাবে উল্লেখ করেছেন,“গোসলের পরে রূমাল (কাপড়) দিয়ে শরীর মোছা মুস্তাহাব। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা (রা.) হতে বর্ণিত আছে - আল্লাহর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটুকরা কাপড় (রূমাল) ছিল যা দিয়ে তিনি অযুর পরে শরীর মুবারক মুছতেন (তিরমিযি শরীফ ১/১১২) ইমাম তিরমিযি এটাকে জয়ীফ হাদীস বলেছেন। কিন্তু ইহা ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা যাবে। সুতরাং শবে বরাতের হাদীস সংক্রান্ত কিছু দলিলকে জয়ীফ হাদীস বলে শবে বরাত পালন করা যারা বিদয়াত বলেন তাদের এধরণের বক্তব্য ইসলামী শরীয়তের মূল দৃষ্টিভংগির খেলাফ।

*এ রাতের আমাল সমূহ ব্যক্তিগত, সম্মিলিত নয়। ফরজ নামায তো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়াই উত্তম। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীসে নেই, আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর কোন প্রচলন ছিল না। - ইকতিযাউস্ সিরাতিল মুস্তাকীমঃ ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ :২১৯।

* শাবান মাসে অধিক হারে নফল ছিয়াম পালন করা সুন্নাত: রামাযানের আগের মাস হিসাবে শাবান মাসের প্রধান করণীয় হল অধিকহারে ছিয়াম পালন করা। আয়েশা (রাঃ) বলেন, “আমি রাসূলুল্লহ (সঃ)-কে রামাযান ব্যতীত অন্য কোন মাসে শাবানের ন্যায় এত অধিক ছিয়াম পালন করতে দেখিনি। শেষের দিকে তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ছিয়াম ত্যাগ করতেন’ (নাসাঈ হা/২১৭৯, সনদ ছহীহ)।

 

এ রাতে করণীয়ঃ

উল্লেখিত হাদীসগুলো দ্বারা এ রাতের মাহাত্ম্য প্রমাণিত হলেও তাতে এ রাতের করণীয় কী, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। শুধুমাত্র হযরত আয়িশার হাদীসে কিছু নমুনা পাওয়া যায়। তবে করণীয়ের চেয়ে এগুলোতে বর্জনীয় কাজের প্রতিই অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। তাই এ রাত্রির মাহাত্ম্য অর্জন করতে হলে প্রথমেই ঐ সব কাজ থেকে নিজেকে পবিত্র করতে হবে। তাওবাহ ও পারস্পরিক সম্পর্ক সুসংহত করে নেয়ার মাধ্যমে। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানির মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। বেশির ভাগ হাদীসে দুটো জিনিস বেশি এসেছে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ। এ দুটি বদগুণ। কারণ এদুটোই এমন মারাত্মক অপরাধ, যা মানুষের ধার্মিকতার মূলে কুঠারাঘাত করে। শিরকের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে দ্বীনের লেশমাত্র থাকে না। আর হিংসা-বিদ্বেষের মাধ্যমে মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। মুসিলম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়।

 

এ রাতের অসিলায় বিদয়াত বর্জনীয় শবে বরাতের ফযিলত অনেকগুলি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু শবে বরাত নিয়ে যে বিদয়াত প্রচলিত তাতো অস্বীকার করতেই হবে। যেমন কিছু লোক দেখা যায় এশার সালাত আদায় করে না, আবার ফজরের সালাতও আদায় করে না। তবে রাত জেগে নফল ইবাদত করে, মাজারে যায়। আবার কিছু মহিলা পাওয়া যায় রুটি ও হালুয়া তৈরী করতে করতে সালাত আদায় করতে ভূলে যায়, কিন্তু তারা আবার রাত জেগে শুধু নফল সালাত আদায় করে তাদের ব্যাপারে কি বলবেন? আর নিয়মিত যে মুসলিম চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখেন এবং নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করেন, রাত জেগে নফল সালাত আদায় করেন, তার জন্য আলাদা কিছু আদায় করার কি কোন প্রয়োজন আছে? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কখন কোন বান্দার প্রতি খাস রহমতের দ্বার খুলে কবুল করে নেন সেটা আমরা কি করে বলি। ঐ সকল লোকতো হাদীস শরীফে বর্ণিত অশেষ ফজিলতের প্রতি বিশ্বাস করেই এ রাতে কিছু হলেও ইবাদত করার চেষ্টা করে এটাকে আমরা নিরুৎসাহিত করে কি লাভ ? ক. প্রথম কথা হলো, রাসূল (স.) শাবান মাসের বেশির ভাগই রোজা রাখতেন। যেমনটি নিচের হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয়। أخرجه النسائي وأبو داود وصححه ابن خزيمة عن أسامة بن زيد قال : " قلت : يا رسول الله ، لم أرك تصوم من شهر من الشهور ما تصوم من شعبان ، قال : ذلك شهر يغفل الناس عنه بين رجب ورمضان ، وهو شهر ترفع فيه الأعمال إلى رب العالمين ، فأحب أن يرفع عملي وأنا صائم " ونحوه من حديث عائشة عند أبي يعلى لكن قال فيه : " إنّ الله يكتب كل نفس ميتة تلك السنة ، فأحب أن يأتيني أجلي وأنا صائم. " হযরত উসামাহ বিন যাইদ থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল (স.) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “ইয়া রসুল্লুল্লহ (স) শাবান মাসে আপনি যে পরিমাণ রোজা রাখেন, আপনাকে অন্য কোন মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনা। তখন রাসূল (স.) বললেন, রজব এবং রমাদানের মধ্যে অবস্থিত শাবান সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই উদাসীন। তাছাড়া, এ মাসে মানুষের আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়, তাই আমি চাই রোজাদার অবস্থায় যেন আমার আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯ খ. হযরত আইশা রা. থেকে বর্ণিত। وَلَمْ أَرَهُ صَائِمًا مِنْ شَهْرٍ قَطُّ أَكْثَرَ مِنْ صِيَامِهِ مِنْ شَعْبَانَ ، كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ ، كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ إِلا قَلِيلا (رواه النسائ فى سننه) রাসলূকে (স.) শাবান মাসের মত এত রোজা অন্য কোন মাসে রাখতে দেখিনি। তিনি পুরো শাবান কিংবা এর অধিকাংশ অংশই রোজা রাখতেন। (নাসাঈ হা/২১৭৯, সনদ ছহীহ)। v শেষ কথা আল্লাহ তায়ালা এ রাতে যদি দুনিয়ার আকাশে আসেন,যদি তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন, যদি অসংখ্য পাপীতাপী বান্দাহ আল্লাহর রহমত ও কৃপা লাভ করেন,যদি তারা গুনাহ, গ্লানি নিঃশেষে মুক্তচিত্তে পুণ্যপথে অগ্রসর হন তবে কোন যুক্তিতে আমরা বিদয়াত বলে তাদেরকে বাঁধা দিবো? খামাখা কোন ভাল জিনিসে জটিলতা সৃষ্টিতে কী লাভ? কোন বিষয় নিয়ে প্যাঁচা-প্যাঁচি করতে গেলে জট কেবল বাড়তেই থাকবে। জট বাঁধাতে ইচ্ছে করলে অনেক বিষয়ে সহীহ হাদিসটেনেও বাঁধানো যেতে পারে। ঝামেলা সৃষ্টি করাও যেতে পারে। হাদিস না মানার অভিযোগে অভিযুক্ত করা যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে বিশ্বাসে মিলে বস্তু-তর্কে বহুদূরকুতর্কে আল্লাহ নেই। তিনি সুতর্ক ও বিশ্বাসে উপযুক্ত সওয়াব দেন। যেসব সাধারণ মানুষ এতকাল ধরে শবে বরাত পালন করে আসছে তাদের সামনে বিদ্যার প্যাঁচ মেরে শবে বরাতের গুরুত্ব ও মহিমা খাটো করে ব্যাখ্যা হাজির করা যাবে বটে; কিন্তু এতে দ্বীনের কোন উপকার হবে কি? শুধু এই একটি রাতে কত শত সহস্র লোক আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে ইবাদত বন্দেগী করে, আল্লাহর নাম নেয়, কুরআন তিলাওয়াত, নামাজ আদায়, জিকির আযকার করে। এই সুবাদে তাদের ছেলে-মেয়েরাও ইবাদতের পরিবেশ পেয়ে কান্নাকাটি করে। কিন্তু বিদ্যার ঠাকুর এসে যদি সে রাতের দুয়ারে তালা লাগিয়ে দেন তাতে সর্বসাধারণের কি লাভ? সাধারণ লোকেরা তো আর জানেনা কোনটা হাদিসে আছে, তারা তো আর বুঝে না কোনটা বিদয়াত আর কোনটা আমলযোগ্য ইবাদত। তাই এদের সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। এ সকল অপপ্রচার শুধুই মুসলিমদের ঈমান আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখার নিমিত্তে নয় কি? এদের ভেলকি বাজির আরেকটি কৌশল হল এরা আপনাকে বুঝাবে শবে বরাত সম্পর্কে হাদিসে যা এসেছে তা জাল, জইফ বা বাতিল ইত্যাদি। যদি সামান্য মূহর্তে জন্য খালিক মালিক মহান রাব্বুল আলামীনের স্মরনে একটু সময় ব্যায় করে যা আপনার দৃষ্টিতে সামান্য, তেমন ইবাদতকে যে আল্লাহ পাক কবুল করবেন না বা কবুল করতে পারেন না এমন গ্যারান্টি আমি আপনি দেয়ার কে? আল্লাহর রাব্বুল ইজ্জত কখন কোন বান্দার প্রতি খাস রহমতের দ্বার খুলে কবুল করে নেন সেটা আমরা কি করে বলি? ঐ সকল লোকতো হাদীস শরীফে বর্ণিত অশেষ ফজিলতের প্রতি বিশ্বাস করেই এ রাতে কিছু হলেও ইবাদত করার চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে থাকেন। এটাকে আমরা নিরুৎসাহিত করে কি লাভ বা কি ফায়দা হবে? শবে বরাত উপলক্ষ্যে প্রচলিত সকল বিদআত ঘৃণীয় অপরাধ। মসজিদ বা বিভিন্ন মাহফিলে যারা সমবেত হন সে সমস্ত আল্লাহর বান্দাদেরকে নিরুৎসাহিত না করে কুরআন-সুন্নাহর মানদন্ডে দ্বীনের আসল স্প্রিট ও মূল দৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তোলা আমাদের দ্বীনি দাওয়াতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাঁর দ্বীনের দাঈ হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

লেখক : ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান . ১৫শাবান ২০১৫ইং.

 📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘

আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুনটেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন

No comments:

Post a Comment

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।