তেলাওয়াতঃ
আমরা জানি যে কোরআনুল কারিমের সূরা সমূহের নাম রাসূল (সঃ) ঠিক করেন নি। বরং আল্লাহ তায়ালাই নির্ধারণ করেছেন। কোরআন শরীফ প্রতি বর্ণও শব্দের ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া গায়রুল্লাহর কোন হাত নেই।
এ সূরার নাম আন- নামল অর্থাৎ ‘পিপীলিকা’ ‘‘The Ant’
এ সূরায় তাইاَلنَّمَلْ শব্দটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তাই তাফসীরবিদগণ নামকরণের জন্যে ইহাই কারণ বলে মনে করেন। প্রকৃত জ্ঞানত আল্লাহ তায়ালার নিকট রয়েছে।
প্রখ্যাত তাফসীরবিদ ইবনে আব্বাস (রাঃ) মনে করেন ইহা সূরা কাসাস এর আগে ও সূরা শুয়ারার কাছাকাছি সময় নাযিল হয়েছে।
এ সূরা মক্কি যুগের মাঝামাঝিতে অবতীর্ণ হয়েছে। ইহা মাক্কী সূরা। সে সময়টি ছিল অত্যাচার ও নির্যাতনের কঠিন সময়। ঈমানদারদের উপর যুলুম ও নিপড়নের পাহাড় ভেংগে পড়েছিল। সহযোগীতার হাত তাদের জন্যে প্রসারিত ছিল না, পৃথিবী ছিল তাদের জন্যে সংকীর্ন।
এ সূরাটিতে ২টি ভাষণ রয়েছে
প্রথমটি ১ম রুকু থেকে ৪র্থ রুকু
এখানে কোরআনুল কারিমের সত্যতা, মুজেজা ও আখেরাতের অনিবার্যতা তুলে ধরা হয়েছে। আর আখেরাতের সফলতার কারণ নেক আমল। নাফরমানী বা বদ আমল পরকালীন জিন্দেগীর বিপর্যয়ের কারণ বলা হয়েছে। অবিশ্বাসীদের অনাচার সৃষ্টির পথ পরিহার করতে ও উহার পরিনতি সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে।
এখানে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির রহস্যের দিকে ইঙ্গিত করেছেন ও কাফেরদের বিবেকের নিকট প্রশ্ন রেখেছেন? ঈমানের দাওয়াতকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে পেশ করেছেন। ঈমানিয়াতের বিষয়গুলোকে বিস্তারিত ও বুদ্ধিভিত্তিক ভাবে পেশ করা হয়েছে
আজকে আলোচ্য আয়াতটি ১ম ভাষণের মধ্যে রয়েছে।
“তার যখন নবী ও দ্বীনের দায়ীদের বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা করল আমিও তাদের ব্যাপারে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম।” -সূরা নমল: ৫০
وَقَدْ مَكَرُوْا مَكْرَهُمْ وَعِنْدَ اللهِ مَكْرُهُمْ وَإِنْ كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُوْلَ مِنْهُ الْجِبَالُ০
“তারা তাদের ষড়যন্ত্রের চাল প্রয়োগ করেছিল, আল্লাহর চাল তাদের চক্রান্তের তীর ব্যর্থ করে দিয়েছিল। বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের এক একটি ষড়যন্ত্র এতই ভয়াবহ ছিল যে, উহাতে পর্বত ও পাহাড়গুলো যেন নড়ে উঠেছিল।” -সূরা ইবরাহীম: ৪৬
“লোকেরা কি নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমাদের আযাব সহসা রাতের আঁধারে আপন গৃহে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদেরকে পাকাড়াও করবেনা।” -সূরা আ’রাফ: ৯৭
“জনপদ মানুষগুলো আল্লাহর শান্তি সম্পর্কে কিভাবে নিশ্চিন্ত রইল যা হঠাৎ করে দিনের আলোতে খেলাধুলায় মত্ত থাকা অবস্থায় এসে যাবে।” -সূরা আ’রাফ: ৯৮
রর. তাফসীর:
’See, then what the end of their plan or secret plot was? Lo! We destro–ed them and their people, everzone’
দ্বিতীয় আয়াতটি প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যা করছে যেন।
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُوْلَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ০
“আল্লাহ তায়ালা যখন কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চান তিনি শুধু বলেন, হয়ে যাও, আর অমনি উহা হয়ে যায়।” -সূরা ইয়াসীন:৮২
فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللهِ نَاقَةَ اللهِ وَسُقْيَاهَا ০ فَكَذَّبُوهُ فَعَقَرُوْهَا فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُمْ بِذَنْبِهِمْ فَسَوَّاهَا ০ وَلاَ يَخَافُ عُقْبَاهَا০
“আল্লাহর রাসূল (সঃ) তাদেরকে বললেন, সাবধান! আল্লাহর উটনীকে পানি পান করা থেকে বাধা দেবে না। সামুদ জাতিরা নবীকে অমান্য করল হত্যা করল মহান প্রভুর কুদরাতের উটনীকে। আর তাদের এ বাড়াবাড়ির ফলে আল্লাহর গজব তাদেরকে পাকাড়াও করল একজনকেও জীবিত রাখা হয়নি গোটা জাতির সবাইকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহকে পরিনতির ভয় করার প্রয়োজন নেই।” -সূরা আস্ সামস: ১৩-১৫
“দেখলেত সালেহ (আঃ) জাতির জন্যে আমার সাবধান ও আযাব কি নির্মম ছিল? আমরা তাদের জন্যে কর্ণপটই চিহ্নকারী এক ভয়ংকর আওয়াজ পাঠালাম যা তাদেরকে লাশ বানিয়ে এভাবে রেখেছিল যেন গামলায় পানিতে ডুবিয়ে রাখা খড়বিছালী।” -সূরা ক্বামার: ৩০-৩১
ররর. তাফসীর
فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا إِنَّ فِي ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ
’Those are their houses fallen down because they were wrong doers. Lo!
therein indeed a lesson for a people who have have knowledge.’
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيْهِمْ مِنْ رَسُوْلٍ إِلاَّ كَانُوْا بِهِ يَسْتَهْزِئُوْنَ০
“আফসোস আমার বান্দাদের জন্যে! তাদের নিকট এমন একজন রাসূল ও আসলনা যাতে তারা ঠাট্টা, বিদ্রোপ, অপমান ও নির্যাতন করেনি।” -সূরা ইয়াসীন: ৩০
পাপাচারে লিপ্ত, সত্য প্রত্যাখ্যান ও আল্লাহর পথে আহবানকারীদের জীবন নিয়ে যারা যখনই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে আল্লাহর শাস্তি এদের সাথে কোন সময় আপোষ করে নি। যথাসময়ে ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের মদদ দান কারী একনকি তাদের প্রজন্ম শুদ্ধ জমিনের সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। আজও তাদের বসতবাড়ী, রাস্তাঘাট, ব্যবহৃত তৈজসপত্র, তাদের সভ্যতার চিহ্ন বহনকারী সবকিছু মাটির নিচে আল্লাহ তায়ালার গজবের ভয়াবহতার জীবন্ত সাক্ষ্য হয়ে পড়ে রয়েছে হাজার হাজার বছরে ধরে। লোকেরা এগুলোকে বলছে মহেঞ্জোদারো ও হরফ্ফার সভ্যতা বলে। তারা জানে না এদের অধিবাসীরা সভ্য ছিল না কারণ ইট-পাটকেলও পাথরের নাম সভ্যতা নয় বরং উহা মানুষের আচরনের নাম। সভ্য আচরণের অধীকারিদের উপর গজবকে হারাম করে দেয়া হয়েছে। কোরআন বলছে গজব ও শাস্তি জালিমদের জন্যে অবারিত-
“কত জনপদকে গজব দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছি যাদের অধিবাসীরা ছিল জালেম ও সীমা লংঘন কারী, তাদের হাম্মাম খানা ও প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ স্মৃতি হয়ে পড়ে রয়েছে।” -সূরা হজ্জ: ৪৫
রা. তাফসীর
’There is lesson or sign in these destruction for a people of knowledge.’
“তারাকি জমিনে বিচরণ করে দেখেনা তাদের পূর্বে জাতি সমূহের পাপাচারের কি ভয়াবহ পরিনতি হয়েছিল? তারা তোমাদের চেয়ে অনেক শক্তির অধিকারী ছিল, অনেক বেশি কর্ষণ করেছিল মাটিকে, অনেক বির্নিমান করেছিল মাটির উপর যা তোমরা করতে পারনি। এদের নিকট সুস্পষ্ট দলীলসহ নবীগণ এসেছিলেন আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করেনি বরং সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে তারাই আল্লাহর গজবকে আহবান করেছিল জুলুম করেছিল নিজেদের উপর।” -সূরা রূম: ০৯
“আজ আমরা তোমার লাশ ধ্বংস হতে দেব না, যাতে পরবর্তী মানব জাতির নিদর্শন করে রেখে দেব। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ আল্লাহর আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে উদাসীন।” -সূরা ইউনুস: ৯২
ক. একটি ঐতিহাসিক সত্য যে সকল যুগে দ্বীনের পথে আহবান কারীদের বিরুদ্ধে বড় বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে।
খ. সত্যের পক্ষ্যে অবস্থানকারীদের পক্ষে অবস্থান রয়েছে মহান প্রভুর।
গ. জালেমদের পরিকল্পনার সব কিছু আল্লাহ জানেন কিন্তু তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত কেউ জানে না।
ঘ. একটি পর্যায়ে আল্লাহর সিদ্ধান্ত যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে আর ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের সব কিছুকে ধ্বংস ও লাশের স্তুপে পরিনত করা হয়েছে।
ঙ. ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি থেকে সকলের জন্যে রয়েছে শিক্ষা- “পাপাচার ও অহংকার” আল্লাহর গজবকে অনিবার্য করে।
চ. কোন বস্তুগত উন্নতি ও কৌশল দিয়ে গজব ঠেকানো যাবে না- ‘ঈমান ও চরিত্র হচ্ছে প্রতিরক্ষা ব্যুহ
কোরআন এসেছে পথচলার চিরন্তন আলো নিয়ে। ইহা ছাড়া কারো নিকট কোন আলো নেই। আজকের জাতিয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে আমরা লক্ষ্য করছি গোটা বিশ্বের প্রতিটি জনপদ আগ্রাসী শক্তি ও তাদের অনুচরদের কঠিন ষড়যন্ত্রের যাঁতাকালে বন্দি। সত্যের সৈনিকদের বিরুদ্ধে চলছে কঠিন হত্যার পরিকল্পনা। এটি কোন নতুন বিষয় নয় সকল যুগেই এমনি হয়েছিল। কোরানে পাকের এ আলোচনার প্রেক্ষিতে দ্বীনের দায়ীদের ঈমান, চরিত্র, সাহস ও যোগ্যতা দিয়ে শত্রুর ষড়যন্ত্র বুঝতে হবে ও নিরাশ না হয়ে মোকাবিলার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে ধৈর্যের সাথে। আল্লাহ তায়ালার নিক্ষিপ্ত চাল পরাশক্তির সকল প্রকার ষড়যন্ত্রের জাল শুধু চিহ্ন করবে না বরং তাদেরকেও মিশিয়ে দেবে মাটির সাথে।
“আল্লাহ তায়ালা কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যখন ইচ্ছা করেন তখন তিনি শুধু বলেন ‘হও’ আর উহা সাথে সাথে হয়ে যায়।” -সূরা ইয়াসীন: ৮২
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।